উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রতিটা শিক্ষার্থীর পছন্দ তালিকার সব সময় থাকে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। যা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত। কম খরচে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কাউন্সিল বা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এর তালিকা অনুযায়ী বাংলাদেশের বর্তমানে ৫৩ সরকারি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। উচ্চ মাধ্যমিকের পর প্রতিটা শিক্ষার্থীর মনে উচ্চ শিক্ষার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দোলা দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রক্রিয়া খুবই জটিল। ২০২০ সালে করনাকালীন সময় সর্বপ্রথম বাংলাদেশের শুরু হয় সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি। এর আগে বাংলাদেশে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করতো একসাথে। যাকে সমন্বিত কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা বলা হয়। এবং তিনটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের পর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় দুটি ধাপে। প্রথমে গুচ্ছ ভর্তির ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশিত হয়। প্রত্যেকটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ও ফলাফল থাকে। এ বছর ২০২৪ ২৫ শিক্ষাবর্ষ কেন্দ্রীয়ভাবে গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
মূলত গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়া দুইটি ভাগে বিভক্ত। মেডিকেল ভর্তি প্রক্রিয়া এবং ডেন্টাল ও নার্সিং ভর্তি প্রক্রিয়া একই রকম।
- প্রাথমিক ভর্তি।
- চূড়ান্ত ভর্তি।
প্রাথমিক ভর্তি প্রক্রিয়া গুচ্ছ পদ্ধতি
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর প্রত্যেক শিক্ষার্থী নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় সিলেক্ট করে আবেদন করতে পারবে। প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ইন্ডিভিজুয়ালি আবেদ ফি ৫০০ টাকা। আর্কিটেকচার, ড্রয়িং, সংগীত, চারুকলা এসব ডিপার্টমেন্টে আবেদন করতে হলে ৩০০ টাকা ব্যবহারিক ভর্তি পরীক্ষার ফি দিতে হবে। ড্রয়িং, আর্কিটেকচার, সংগীত, চারুকলা বিভাগে ভর্তি হতে হলে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রাথমিক ভর্তিদের নির্বাচিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তির জন্য ৫০০০ টাকা অনলাইনে জমা দিতে হবে। এর মাধ্যমেই শুরু হবে কেন্দ্রীয় ভর্তি কার্যক্রম।
গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতির কেন্দ্রীয় ভর্তির প্রক্রিয়া
ভর্তির চূড়ান্ত রেজাল্ট দেওয়ার পর আবেদনকারী জিএসটি ওয়েব সাইটে লগইন করতে হবে ফলাফল জানার জন্য।ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করে ভর্তির জন্য নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ দেখতে পারবে। নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত ভর্তি হওয়ার জন্য প্রথমে প্রাথমিক ভর্তি নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক ভর্তির জন্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রার্থী যদি প্রাথমিক ভর্তি সম্পন্ন না করে। তবে সে চূড়ান্ত ভর্তির জন্য নির্বাচিত হবে না। অনলাইনে ৫০০০ টাকা প্রাথমিক ভর্তি ফি পরিশোধের পর মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মূল নম্বর পত্র (মার্কশিট) জমা দিতে হবে। ভর্তির জন্য মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে। যদি এমন হয় ভর্তি ফি ৫ হাজার টাকা অনলাইনে জমা দিয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় জমা দেওয়া হয়নি তাহলে ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে।
পরবর্তীতে জিএসটি ভূক্ত কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। দ্বিতীয় মেধা তালিকা থেকে বিভাগ ও বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন চালু হয়ে যাবে। মাইগ্রেশন সবসময় উপরের দিকে হবে। আবেদনকারী চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বা ভর্তির সাবজেক্ট মাইগ্রেশন অফ করে দিতে পারবে। তবে সাধারণত চতুর্থ মেরিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বা সাবজেক্ট মাইগ্রেশন একটি অফ করলে অন্যটি এমনিতে অফ হয়ে যায়। তবে চতুর্থ মেরিট প্রকাশের পর আবেদনকারী চাইলেই বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন অথবা সাবজেক্ট মাইগ্রেশন অফ করতে পারে। এ বিষয়ে বিস্তারিত ভর্তি পরীক্ষার ওয়েবসাইট নোটিশ দেয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত ভর্তি শুরু হওয়ার আগে প্রার্থী মাইগ্রেশন এর পর যে বিভাগে ভর্তির জন্য মনোনীত হবে সেখানে ভর্তি হতে হবে।
বিভাগ মাইগ্রেশন
আবেদনকারীর আবেদনের ক্রমানুসারে প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগের মাইগ্রেশন হবে। মাইগ্রেশন অবশ্যই বর্তমানে সাবজেক্ট চয়েস এর উপরের দিকে সাবজেক্ট হবে। কখনোই মাইগ্রেশন নিচের দিকে হবে না। সাবজেক্ট লিস্টের উপরের দিকে যদি অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় থাকে আসন ফাঁকা থাকার সাপেক্ষে মাইগ্রেশন হবে। মাইগ্রেশন বন্ধ না করলে চূড়ান্ত ভর্তি সম্পন্ন বা ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত অটো মাইগ্রেশন চালু থাকবে। আবেদনকারী যদি তার পছন্দের বিভাগ পেয়ে যায় বা বিশ্ববিদ্যালয় যেতে না চায়। এক কথায় বলতে গেলে বিভাগ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবর্তন না করতে চাইলে সাবজেক্ট মাইগ্রেশন অফ করে দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের ভিতর যদি মাইগ্রেশন অফ না করা হয় তাহলে অটো মাইগ্রেশন হয়ে যাবে। মাইগ্রেশন হয়ে যাওয়ার পর ভর্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্বের সাবজেক্টে বা বিশ্ববিদ্যালয় থাকার কোন সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন
আবেদনকারী যদি প্রথমে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়। এবং এরপর মাইগ্রেশনের মাধ্যমে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় চলে আসে তাহলে নিজ দায়িত্বে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রাথমিক ভর্তির স্থানান্তর করতে হবে। তবে জমাকৃত মূল কাগজপত্র স্থানান্তরের প্রয়োজন নেই। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় জমাকৃত মূল কাগজপত্র স্থানান্তরের বিষয়ে পড়ে ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক নোটিশ দেওয়া হবে। আবেদনকারী যদি অন্য বিশ্ববিদ্যালয় না যেতে চান তাহলে নিজ দায়িত্বে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন স্টপ করতে হবে। আবেদনকারী যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি থাকাকালীন শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশন অফ করে তবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য বিভাগে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এটাকে আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বলা হয়।
গুচ্ছ ভর্তি বাতিল
প্রাথমিক ভর্তি প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় আবেদনকারী যদি স্বেচ্ছায় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভর্তি বাতিল করে। তাহলে পরবর্তীতে কোনক্রমে ই ভর্তির জন্য নির্বাচিত বিবেচিত হবে না। সেক্ষেত্রে মূল কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিজ দায়িত্বে সংগ্রহ করতে পারবেন। অথবা অনলাইনে টাকা জমা দেওয়ার পর যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাগজপত্র জমা না দেওয়া হয় তাহলে এমনিতে ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে। চূড়ান্ত ভর্তি পরেও ভর্তি বাতিল করা যায়।
চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়া গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা
সকল প্রকার প্রাথমিক ভর্তি কার্যক্রম এবং মাইগ্রেশন সম্পন্ন হওয়ার পর চূড়ান্ত ভর্তি স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে। আবেদনকারী যে বিশ্ববিদ্যালয় নির্দিষ্ট বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সরাসরি উপস্থিত হয়ে, চূড়ান্ত ভর্তি সম্পন্ন করতে হবে। নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফি হতে পাঁচ হাজার টাকা সমন্বয়পূর্বক ভর্তি ফি জমা দিতে হবে। চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়ার সময় যদি কেউ ভর্তি সম্পন্ন না করে সে ক্ষেত্রেও ভর্তি বাতিল হয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে উচ্চ শিক্ষার একটি ধার খুলে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় শুরু একাডেমিক নয় পাশাপাশি প্র্যাকটিকাল একটি শেখার জায়গা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ, বন্ধুবান্ধব, প্রতিযোগিতা পূর্ণ পরিস্থিতি সবকিছু মিলিয়ে প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীকে শিক্ষার একটা পারফেক্ট পরিবেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয়।