দেশের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মান উন্নয়নে আরও একধাপ এগিয়ে গেল সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট থেকে এই বিভাগের অধীনে থাকা ৩৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে গবেষণাগার সরঞ্জামাদি কেনার জন্য প্রায় তিন কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এই বরাদ্দ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জনে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বরাদ্দ ও উদ্দেশ্য
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের রাজস্ব বাজেট শাখা থেকে জারি করা একটি আদেশে জানানো হয়েছে যে, ‘গবেষণাগার সরঞ্জামাদি’ খাত থেকে মোট ৩৪২টি কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ২ কোটি ৯৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭০০ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এই বরাদ্দের মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আধুনিক গবেষণাগার স্থাপন বা বিদ্যমান গবেষণাগারের উন্নয়ন করে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা। আদেশে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই বরাদ্দকৃত অর্থ শুধুমাত্র গবেষণাগার সরঞ্জামাদি কেনার কাজে ব্যবহার করা যাবে এবং কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো খাতে এই অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
প্রতিষ্ঠানের ক্যাটাগরি অনুযায়ী বরাদ্দ
প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বরাদ্দপ্রাপ্ত ৩৪২টি প্রতিষ্ঠানকে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে:
‘এ’ ক্যাটাগরি: এই ক্যাটাগরিতে ১৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঢাকা, গাজীপুর, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রাঙামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, কক্সবাজার, রাজশাহী, বগুড়া, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, রংপুর, খুলনা, বাগেরহাট, যশোর, বরিশাল, পটুয়াখালী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, ময়মনসিংহ এবং নেত্রকোনা অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো এই ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত। এই ১৯২টি প্রতিষ্ঠানের জন্য মোট ১ কোটি ৬৬ লাখ ৪৬ হাজার ৪০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
‘বি’ ক্যাটাগরি: এই ক্যাটাগরিতে ১২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, রাজবাড়ী, বান্দরবান, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা, জামালপুর এবং শেরপুরের ১২৬টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ১ কোটি ৮ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
‘সি’ ক্যাটাগরি: এই ক্যাটাগরিতে ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মাদারীপুর, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, মেহেরপুর, নড়াইল এবং ঝালকাঠি অঞ্চলের এই ২৪টি প্রতিষ্ঠানের জন্য ২০ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
অর্থ উত্তোলন ও ব্যবহারের শর্তাবলী
বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এই বরাদ্দ কেবলমাত্র কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ব্যবহারযোগ্য। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য এই অর্থ ব্যয় করা যাবে না।
অর্থ উত্তোলনের ক্ষেত্রে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান বিলের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা/সার্বিক) অথবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিস্বাক্ষরে জেলা বা উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে অর্থ উত্তোলন করবেন।
গবেষণাগার সরঞ্জামাদি কেনার পর তা অবশ্যই প্রতিষ্ঠানের রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং পরিদর্শনের সময় প্রদর্শনের জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকবেন সংশ্লিষ্ট জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক।
কোনো ধরনের আর্থিক বা পদ্ধতিগত অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান এবং দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মকর্তাকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। আদেশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বরাদ্দকৃত অর্থের মধ্যে যদি কোনো অংশ অব্যয়িত থাকে, তবে তা চলতি বছরের ৩০ জুনের মধ্যে সরকারি কোষাগারে ফেরত জমা দিতে হবে।
গবেষণাগার সরঞ্জামাদি কেনার জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই প্রায় তিন কোটি টাকার বরাদ্দ নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এটি শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। তবে, বরাদ্দকৃত অর্থের সঠিক ও স্বচ্ছ ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং আরোপিত শর্তাবলী কঠোরভাবে মেনে চলা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধান ও কর্মকর্তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই বরাদ্দ কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
আরও পড়ুন: BIA অ্যাকচুয়ারিয়াল সায়েন্স ডিপ্লোমা ভর্তি ২০২৫: আবেদন করুন ২৯ মের মধ্যে
1 thought on “কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নে প্রায় ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ”